ঘাড়ে ব্যথা: কি, কেন হয়, উপসর্গ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা

ঘাড়ে ব্যথা কেন হয়

Better Asked on October 23, 2023 in Health.
Add Comment
  • 1 Answer(s)

    ঘাড়ে ব্যথা কি?
    ঘাড়ে ব্যথা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যে বিষয় নিয়ে প্রতি তিনজন মানুষের মধ্যে একজন অভিযোগ জানান। ঘাড়ের ব্যথার কারণ হতে পারে ঘাড়ে খুব সাধারণ মাংশপেশিতে টান অথবা জটিল কোনও পরিস্থিতি, যেমন কশেরুকার স্নায়ু সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া। শিরদাঁড়ার হাড়ের (ভার্টিবা)অসুখ, গেঁটে বাত (আর্থারাইটিস), সারভাইকাল স্পন্ডিলসিস এবং অন্যান্য শারীরিক পরিস্থিতি থেকে ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে, যার অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। বিশেষত একাধিক সন্তানের মা এবং যাঁদের দুর্বল শরীর তাঁদের ঘাড়ের ব্যথার ঝুঁকি বেশি থাকে। সাধারণত কোনও দুর্ঘটনার পর ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, যাকে বলা হয় ‘হুইপল্যাশ’, তার উপসর্গ দীর্ঘবছর ধরে থাকে। ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসার বিভিন্ন রকমফের আছে এবং তা রোগের মূল কারণের ওপর নির্ভর করে হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময়ে ঘাড়ের ব্যথার নিরাময় এক সপ্তাহের মধ্যে হয়। খুবই কম সময়ে তা এক বা একাধিক বছর থেকে যায়।

    ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার কারণ:
    একাধিক কারণে ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে, তারই কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হল:

    • দুর্বল পেশি এবং পেশির অত্যধিক ব্যবহার: দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় পেশি টানটান করে বসে থাকলে খিল ধরে এবং কাঁধে এবং ঘাড়ে ব্যথা হয়। দুর্বল পেশিকে শারীরিক কাজে বেশি ব্যবহার করলে, যেমন সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা, তা থেকে ঘাড়ের ব্যথা হয়।
    • ঘাড়ের টিস্যুর ক্ষয়: বয়সজনিত কারণে টিস্যুর ক্ষয়ের ফলে সারভাইকাল স্পন্ডিলসিস এবং ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এই অবস্থায় হাড়ের মধ্যেকার ফাঁক সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং হাড়ের ধারে ধারে ছোট ছোট অস্থিকণা জন্মায়।
    • কশেরুকার ডিস্ক পরিবর্তিত হওয়া: শিরদাঁড়া বা কশেরুকা ক্ষয় হলে শিরদাঁড়ার ডিস্ক বা স্পাইনাল ডিস্ক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়। কোনও কোনও সময়ে স্পাইনাল ডিস্ক টিস্যু ফুলে গেলে স্লিপ ডিস্ক হতে পারে।
    • কশেরুকার ক্যানাল সঙ্কীর্ণ হওয়া: একটি সঙ্কীর্ণ কশেরুকা ক্যানাল স্নায়ুকে সঙ্কুচিত করে এবং ঘাড়ের ব্যথার কারণ হতে পারে যা কাঁধ এবং বাহুতে ছড়িয়ে পরতে পারে।
    • শারীরিক আঘাত বা ট্রমা: কোনও দুর্ঘটনায় হঠাৎ ঝাঁকুনির ফলে ঘাড় ভাল রকম জখম হতে পারে। এটাকেই বলা হয় হুইপল্যাশ আঘাত।
    • অঙ্গবিন্যাসে ত্রুটি: বসার ভঙ্গীতে যদি ত্রুটি থাকে, যেমন দীর্ঘক্ষণ অলস ভঙ্গীতে বসে থাকা, তাহলে ঘাড়ের ওপর খুব চাপ সৃষ্টি করে এবং ঘাড়ে ব্যথা হয়। আবার, কখনও কখনও ঘুমোবার সময়ে কয়েক ঘণ্টা ঘাড় বেঁকে থাকতে পারে। তা থেকে ঘাড়ে খুব যন্ত্রণা হতে পারে এবং টান ধরতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরাতে অসুবিধা হয়।

    ঘাড়ে ব্যথা এর চিকিৎসা:
    ওষুধ প্রয়োগের সঙ্গে জীবনশৈলীর পরিবর্তন করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসা করা হয়। আপনার চিকিৎসক যে পরামর্শ দেবেন তার মধ্যে থাকতে পারে ব্যথা কমানোর ওষুধ, ফোলা বা প্রদাহরোধী ওষুধ, পেশি শিথিল করার ওষুধ, শিরদাঁড়ায় ইনজেকশন, ফিজিক্যাল থেরাপি, ব্রেস-এর ব্যবহার, এবং কাইরোপ্র‌্যাকটিক চিকিৎসা।

    • শক্তিবৃদ্ধির প্রশিক্ষণঃ বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ের ব্যথা অন্যান্য চিকিৎসায় সাড়া দেয় না, এবং পেশি শক্তি বাড়ানোর প্রশিক্ষণ নিলে কাজ দেয়। এই ব্যায়ামগুলি ঘাড়ের অনমনীয় পেশিগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। একটি সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে যে, পেশির শক্তি বাড়াতে যে নির্দিষ্ট ব্যায়াম আছে তা নিয়মিত করা হলে ঘাড়ের ব্যথা থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। যদি আপনার ঘাড়ে কয়েক মাস ধরে ব্যথা থাকে তাহলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন এবং পেশির শক্তি বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চান, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, কোনও ব্যায়াম শুরু আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে ঘাড়ে ব্যথা থাকাকালীন অবস্থায়। যদি এমন কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে ব্যায়াম করলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে তাহলে চিকিৎসক আপনাকে ব্যায়াম বন্ধ করার পরামর্শ দেবেন।
    • ফিজিওথেরাপিঃ যদি একটানা ব্যথা থাকে তাহলে আপনার চিকিৎসক আপনাকে কোনও ফিজিথেরাপির প্রশিক্ষকের কাছে যেতে বলবেন। একজন ফিজিওথেরাপি প্রশিক্ষক আপনাকে বিভিন্ন ব্যায়াম সম্পর্কে তথ্য জানাবেন এবং আপনার ব্যথার বিষয়ে অভিহিত করে, ব্যথা কমাতে সাহায্য করবেন। ফিজিওথেরাপি করলে মানুষ আবার দৈনন্দিন ছন্দে ফিরতে পারে।
    • অস্ত্রোপচারঃ চিকিৎসকেরা খুব অল্প সময়েই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন, বিকল্প সমস্ত রকম চিকিৎসা ব্যর্থ হলে তবেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জটিল পরিস্থিতিতে, যেমন সারভাইকাল স্পাইন অস্থিতিশীলতা (ইনস্টেবিলিটি) বা নিউরোলজিক্যাল ডিসফাংশনের সময়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
    • কাইরোপ্র‌্যাকটিক থেরাপিঃ নির্দিষ্ট এলাকায় নিয়ন্ত্রিত চাপ ব্যবহার করে ঘাড়ের ব্যথার যে বিকল্প চিকিৎসা তাকেই কাইরোপ্র‌্যাকটিক বলা হয়।

    ঘাড়ের ব্যথায় নিজের যত্নঃ

    • যদি আপনি আপনার ঘাড় না নাড়াতে পারেন তাহলে আপনি কিছু বিশেষ কাজ কর্ম এড়িয়ে চলবেন, যেমন গাড়ি চালানো বা ঘোড়ায় চড়া, কারণ তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
    • আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘাড়ের আন্দোলন বন্ধ করবেন না বা ঘাড়ের কলার পরবেন না।
    • ব্যথার উপশমের জন্য ঘাড়ে গরম বা ঠান্ডা সেঁক নিতে পারেন।
    • ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে যন্ত্রণা নিরোধক ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, নিজের ইচ্ছামত ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে এবং পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। যদি আপনার ব্যথা এক সপ্তাহের মধ্যে না কমে তাহলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

    ঘাড়ের ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়ঃ

    • সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।
    • আপনি যখন ল্যাপটপ বা পিসি ব্যবহার করবেন; তখন নিশ্চিত হয়ে নিন যে স্ক্রিনটি চোখ বরাবর আছে কি-না।
    • আপনার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করার সময়, নিশ্চিত করুন যে টেক্সট করার সময় আপনার ঘাড়ে চাপ পড়ছে না।
    • আপনার ঘাড়ের পেশী শিথিল রাখতে নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করুন।
    • দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালাবেন না। কারণ এতে আপনার ঘাড় এবং পিঠ শক্ত হতে পারে।
    • আপনি যদি মনে করেন, ঘুমের অবস্থানের কারণে ঘাড় ব্যথা করছে; তাহলে সঠিক বালিশ ও বিছানা ব্যবহার করুন।

    দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ে ব্যথা সাধারণত ভুল অঙ্গভঙ্গি, শারীরিক চাপ এবং খাদ্যাভাসের ফলস্বরূপও হতে পারে। প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকারেও যদি আপনার ব্যথা না কমে; তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

    Best Answered on October 23, 2023.
    Add Comment
  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.