কিভাবে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলা শুরু করা যায়?

কিভাবে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলা শুরু করা যায়?

Better Asked on October 24, 2023 in Biography.
Add Comment
  • 1 Answer(s)

    সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারাও একটা আর্ট যা সবার থাকে না। একজন মানুষের কথা বলার মধ্য দিয়েই তার ভিতরের সৌন্দর্য ফুটে উঠে।

    বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন মাস্টার্স পাশ করা শিক্ষিত লোক কে যদি কোথাও বক্তব্য দিতে বলা হয়, তাহলে ১-২ মিনিট বলার পর সে ভাষা হারিয়ে ফেলে। কথা বলতে ইতস্তত বোধ করেন। অনেকের তো আবার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। কেউ হয়তো বক্তব্যর শুরুটাই করতে পারে না। আমার জীবনে আমি অনেক জ্ঞানী শিক্ষকও দেখেছি যিনি সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে না পারায় তার ক্লাস বুঝতে আমাদের অসুবিধা হতো। আমাদের সমাজে অনেক সুন্দর, ভদ্র,জ্ঞানী মানুষ আছে যারা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে না পারার কারনে তারা তাদের মতামতকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু আমরা যদি কিছু বিষয় মাথায় রাখি তাহলে খুব সহজেই সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারি।

    এবার প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই বলে রাখি যদিও আমি নিজেই ভালো করে কথা বলতে পারি না এখনও অনেক বিষয় আমার শিখা উচিত তবুও আমি মনে করি কিছু বিষয় আমার জানা আছে যে গুলো হয়তো অন্য কেউ জানলে ভালো একটা কনভারসেশন করতে পারে এবং যে কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলে তাকে ইমপ্রেস করতে পারে।

    সবার শুরুতে আমরা যার সাথে কথা বলতে চাই বা যাকে ইমপ্রেস করতে চাই তার চোখের দিকে তাকাতে হবে। অর্থাৎ যাকে আমরা “আই কন্টাক্ট” বলি। চোখ দেখে যদি আপনার মনে হয় যে, সে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক বা আগ্রহী তাহলে আপনি কথা বলা শুরু করতে পারেন। একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলার জন্য কিছু পয়েন্ট আমাদের জানা উচিত বলে মনে করি। সেগুলো জানা থাকলে আমরা একজন অপরিচিত মানুষকে খুব সহজেই ইমপ্রেস করতে পারি। সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলার জন্য আমার নিজের কিছু গাইডলাইন শেয়ার করলামঃ

    1. আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলাঃ আপনি যার সাথেই কথা বলেন না কেনো আপনার আত্নবিশ্বাস থাকতেই হবে যে আপনি পারবেন। এতটুকু সাহস যদি আপনার থাকে তাহলে সত্যি আপনি যার সাথেই কথা বলেন না কেনো আপনি সুন্দর ভাবে, ভদ্রতার সাথে গুছিয়ে কথা বলতে পারবেন। আপনি যখন আপনার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যেরর সাথে নির্দ্বিধায় কথা বলেন এতে আপনি কোন ভয় পান না বা কোন ইতস্তত বোধ করেন না। ঠিক অনুরূপ ভাবে আপনি সেই অপরিচিত ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন।
    2. স্পষ্টভাবে কথা বলাঃ আপনি যাই বলুন না কেন তা যেনো স্পষ্ট হয়ে থাকে। কথার মাঝে যেন কোন আঞ্চলিকতা না থাকে। উদাহরণ হিসাবে ধরতে পারি আমরা অনেকে বলে থাকি, “কেমন আচেন?” এই কথাটা যদি আমরা শুদ্ধভাবে বলি তাহলে হবে, “কেমন আছেন?” এই যে,’চ’ এর জায়গায় ‘ছ’ দেওয়াতে শব্দটা শ্রুতিমধুর হয়েছে। এখন কথাটা আমাদের শুনতে ভালো লাগবে। তবে আঞ্চলিকতা কোন খারাপ বিষয় না। এই ভাষায় আমরা আমাদের পরিচিত মানুষের সাথে কথা বলবো। তখন বিষয় টা আলাদা। কিন্তু আমাদের এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে আমরা যার সাথে কথা বলছি তাকে ইমপ্রেস করতে হবে। তাই আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে। যদি কোন মুদ্রাদোষ থাকে তা ত্যাগ করতে হবে। মুদ্রাদোষ বলত অনেকে কথার মাঝে বুঝছেন,করছেন, গেছেন এ গুলো বলে থাকে এ সব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
    3. সঠিক বাচনভঙ্গিঃ এই পয়েন্ট টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কি বলছি এটার সাথে আমাদের কি রকম বাচনভঙ্গি হওয়া দরকার এইটা মাথায় রাখতে হবে। যেমন কেউ আপনাকে বললো, “কেমন আছো তুমি?” আর আপনি উত্তরে বললেন, জ্বি! ভালো আছি। কিন্তু, আপনার মুখের যে বাচনভঙ্গি তা দেখে মনে হলো না যে আপনি ভালো আছেন। তাই কথা বলার সময় যেনো এরকম বাচনভঙ্গি না হয় । আর একটা বিষয় হলো অনেকে কথা বলার সময় নাকে হাত দেয়, কেউ কান খোঁচায়, কেউ নক কামড়ায় এসব করা যাবে না। এসব নোংরা অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করতে হবে। তানাহলে যার সাথে আপনি কথা বলছেন তার কাছে আপনি ভদ্র ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হবেন না। আপনার প্রতি তার একটা খারাপ মন-মানসিকতা তৈরি হবে। তাই আমাদের কথা বলার সময় বাচনভঙ্গি এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
    4. কথার মাঝে হাসি থাকতে হবেঃ আমরা সবাই হাসি-খুশি থাকা মানুষ পছন্দ করি।তাদের সাথে কথা বলে আমাদের ভালো লাগে। তাই, আমরা কথা বলার সময় আমাদের মুখে যেনো একটা হাসি- খুশি ভাব রাখি। এখন হাসতে হবে বলে এই না যে, হা হা করে উচ্চ স্বরে হাসি, তাহলে আপনাকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাববে না। কথা বলার সময় নিজেও হাসতে হবে আর যার সাথে কথা বলছেন তাকেও হাসানোর চেষ্টা করতে হবে ।
    5. ধীরে কথা বলাঃ আমরা যখন কোন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলবো তখন ধীরে কথা বলার চেষ্টা করবো। তাহলে কথা বলার সময় আমাদের মস্তিষ্ক বেশি সময় পাবে তাই ভুল হওয়ার সম্ভবনা কম থাকবে। তাই আমরা ধীরে কথা বলবো।
    6. শুনুন বেশি বলুন কমঃ কথা বলার সময় আমাদের এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে আমরা একজন অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলে তাকে ইমপ্রেস করতে চাই; তাই আমরা যেনো নিজেই শুধু বলতে না থাকি। তাকে বলার সুযোগ করে দিয়ে আমারা নিজেই চুপ থাকবো। মনে রাখবেন একজন ভালো স্পিকার হতে হলে আগে একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে। তাই আমরা যার সাথে কথা বলছি সে কি বলছে তা ভালোভাবে শুনতে হবে পর্যবেক্ষন করতে হবে। তাহলে তার কথার সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। হাত বাড়িয়ে যেনো আমরা নিজের থেকে কিছু বলতে না যাই। কারও সাথে কথা বলার সময় আমাদের কান আর চোখের কাজ বেশি করতে হবে আর মুখের কাজ কম। সবকিছু ভালো করে শোনার পর বলতে হবে। এটা বলার কারন হলো আমরা অনেকে কথা বলার সময় এতই কথা বলতে থাকি যে, কি নিয়ে কথা বলছি এটাই ভুলে যাই। পরে হাসতে হাসতে বলি আমি যেনো কি নিয়ে কথা বলছিলাম; এরকম টা যেনো না হয়। তাই শুনুন বেশি বলুন কম । তাকে আপনি গুরুত্ব দেন। তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন তাহলে তাকে আপনি ইমপ্রেস করতে পারবেন
    7. তার পছন্দের বিষয়ে কথা বলাঃ আমার মনে হয় এই বিষয়টা সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেকেই কথা বলার সময় এই জায়গায়তেই ভুল করি। আমরা একজন মানুষের সাথে কথা বলে তাকে ইমপ্রেস করতে চাই অথচ তার কি বিষয়ে কথা বললে ভালো লাগে এটা বুঝে উঠতে পারি না।তাই আমাদের এটা বুঝতে হবে যে সে কোন বিষয়ে কথা বললে আগ্রহী বা তার কোন বিষয় টা ভালো লাগে। উদাহরণ হিসাবে ধরতে পারি, যার সাথে কথা বলছি তার হয়তো বই পড়তে ভালো লাগে সে এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে তাই আমাদের উচিত হবে বই নিয়ে নানান কথা বলা, তার সুরে সুর মিলানো। আপনি তখন তাকে আপনার ছোটবেলার পছন্দের বই নিয়ে কিছু বলতে পারেন বা সাম্প্রতিক যে বইটি পড়েছেন সেই বই নিয়েও কিছু বলা যেতে পারে। আবার এরকম টা না বলা যে আমার বই পড়তে ভালোলাগে না। তাহলে বিষয় ভালো দেখাবে না। আবার আপনি হয়তো তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার প্রিয় অভিনেতা কে? সে হয়তো বললো, তার প্রিয় অভিনেতা আমির খান তার কাছে আমির খানের অভিনয় ভালো লাগে। কিন্তু আপনার কাছে শাহরুখ খানের অভিনয় বেশি ভালো লাগে এখন আপনি হুট করে বলে বসলেন যে, না। আমির খানের চেয়ে শাহরুখের খানের অভিনয় ভালো হয়। এরকম হুট করে কথা বললে তার মতামতের সাথে আপনার মতামতের পার্থক্য দেখা দিবে এতে করে সে বেশি কিছু বলতে চাইবে না । কিন্তু আমরা যদি এটা বলি যে, হ্যাঁ। আমির খানের অভিনয় আমারও ভালো লাগে। আপনার দেখা একটা মুভির নাম নিয়ে বললেন যে তার অভিনীত এই মুভিটা আমরা খুব ভালো লেগেছে। আমির খানের অভিনয় অনেক সুন্দর ছিল সেই মুভিতে। এরকমটা বললে হবে কি আপনি যার সাথে কথা বলছেন তার কাছে একজন পছন্দের মানুষ হয়ে উঠবেন। তার সাথে আপনারও মিল রয়েছে এতে করে সে আপনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী হবে। তার তখন আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগবে। যদি তার সুরে সুর মিলাতে নাও পারেন সমস্যা নেই তবে ভুলেও তার মতামতের বিরুদ্ধে কিছু বলতে যাবেন না। আমাদের এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে একজনের সাথে আরেক জনের মত পার্থক্য থাকতেই পারে। তাই কখনও আমাদের নিজেদের মতামতকে সবসময় প্রাধন্য দেওয়া যাবে না। কারন আমরা তাকে ইমপ্রেস করতে চাই। কোন ডিবেট প্রতিযোগিতা হলে বিষয়টি আলাদা। আপনি তার সাথে ভালো কনভারসেশন এর জন্য সাম্প্রতিক বিষয় গুলো নিয়ে কথা বলতে পারেন। এতে সে বলতে পারবে। কারন এ গুলো আমরা প্রায় সবাই জানি অথবা আমরা তাকে তার ফিউচার প্লান নিয়ে জানতে চাইতে পারি এতে সে নিজের কথা সুন্দর করে বলতে পারবে কারন বিষয়টি তার ভালো লাগার। কথা বলার সময় এমন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে না যাতে সে বিরক্ত হয় বা তার এমনটা মনে হয় যে আপনি তাকে জ্ঞান দিচ্ছেন। এ বিষয়টি যেনো আমাদের মাথায় থাকে।
    8. তার প্রশংসা করাঃ আমরা সবাই আমাদের নিজেদের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসি। তাই যারা আমাদের প্রশংসা করে তাদের কেও আমাদের ভালো লাগে। তাই আমরা যাকে ইমপ্রেস করতে চাই তার প্রশংসা করতে হবে। আবার এমন প্রশংসা না যেনো তাকে তেল দিচ্ছেন,যে প্রশংসার সে যোগ্য না তাকে সেই প্রশংসা করছেন। এতে সে খুশী হওয়ার চেয়ে আরও বেশি মন খারাপ করবে। প্রশংসা হিসাবে বলতে পারেন যে তোমার এই কাজটা আমার খুব ভালো লাগে বা লেগেছে অথবা আপনি এটা বলতে পারেন, তোমাকে এই ড্রেসে অনেক সুন্দর লাগছে। তাহলে সে খুশি হবে।
    9. আগে থেকে প্লান করাঃ আপনি যার সাথে কথা বলবেন তা আগে থেকে প্লান করে রাখলে বিষয়টি ভালো হয় এতে করে আপনি সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারবেন। আপনি আগে থেকে প্লান করবেন যে আজকে আমি এই বিষয় টি নিয়ে তার সাথে কথা বলা শুরু করবো। তারপর এই বিষয় দিয়ে শেষ করবো। তাহলে আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারবেন। উদাহরণ হিসাবে ধরাযাক, আপনি আজকে একজন মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে যাবেন তো আপনি আগে থেকে ভাবলেন যে আমি শুরুতে তাকে এই বিষয় নিয়ে বলবো তারপর আমি যদি রেস্টুরেন্টে কোন বেবি দেখি তাহলে তাকে এটা বলবো যে দেখো বেবিটা অনেক কিউট না? এতে হয়তো সে বিরক্ত হবে না। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করবো তার বাসায় এমন কোন বেবি আছে কিনা; তারপর আমি সাম্প্রতিক এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো। কারন বর্তামনে এই বিষয়টা প্রায় সবার জানা তারও হয়তো বিষয়টি অজানা নয়। এরকম প্লান আগে থেকে করলে আপনার তার সাথে কথা বলতে ভাবতে হবে না। অনেকে দেখা যায় কি বলবে এটা ভাবতেই ২ মিনিট সময় নিয়ে নেয় এতে ভালো একটা কনভারসেশন হয় না। তাই আগে থেকে পরিকল্পনা করতে হবে যে কথা বলা কিভাবে শুরু করবেন।
    10. বিদায় জানানোঃ কথা বলা শেষে তাকে সুন্দর ভাবে বিদায় জানাতে হবে । আপনি কনভারসেশন শেষে তাকে বলতে পারেন যে আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। সত্যি! আপনার সাথে কথা বলে দারুন সময় পার করলাম! তারপর তাকে বললেন, “আজকের দিনটা তোমার জন্য শুভ হোক!” তারপর তাকে সালাম দিয়ে কথা শেষ করলেন। এতে আপনার ভদ্রতা প্রকাশ পেলো। যার সাথে কথা বললেন তার কাছে আপনার কথা বলার সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি ভেসে উঠলো। এতে সে আপনার সাথে কাটানো সময় মনে রাখবে।

    সবশেষে বলবো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলার জন্য আসলে কোন টেকনিক শিখে বেশি একটা লাভ হবে না যদি না আপনি কথা বলার অভ্যাস গড়ে না তোলেন। তাই চেষ্টা করুন আপনার যার সাথেই কথা বলতে ভালো লাগে তার সাথে প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয় এ কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা।

    Best Answered on October 24, 2023.
    Add Comment
  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.